মুজিব - একটা ইমোশনাল জার্নি
- Shakib Chowdhury
- May 25, 2024
- 3 min read
। রেটিং - দশে ৮।

মুজিব ছবি দুই দেশের সরকার মিলে বানিয়েছে। ক্রিয়েটিভিটি বায় কমিটি ভালো হবার কথা না। দুই দেশের অজস্র আমলা মিলে এই অতি সেনসিটিভ টপিক নিয়ে একটা খিচুড়ি বানাবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু না। হয়েছে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী একটা সুন্দর, আবেগবান গল্প।
(মনে রাখবেন আমার প্রশংসার কথাগুলো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটে। আন্তর্জাতিক মান অথবা দর্শক চিন্তা করে এই ছবি বানানো হয় নাই)
দ্যা গুড - আমি চেয়েছিলাম এই ছবি দেখে যেন কিছু একটা ফিল করি। আমি চেয়েছিলাম যেন একটা সুন্দর ন্যারেটিভ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে। যেন সবার অভিনয় অন্তত সেই পর্যায়ের হয় যে আমি কিছুটা হলেও বিশ্বাস করব যা দেখছি পর্দায়। যেন সংলাপ শুনে না মনে হয় যে শুধুই মেলোড্রামাটিক কথা হচ্ছে। অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আমি যা আশা করেছি তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। এবং এই পুরো ক্রেডিট নির্মাতা শ্যাম বেনেগল'এর। অবশ্যই উনার সাথের লোকজন অনেক সাহায্য করেছে, একটা ভালো টিম ছাড়া ভালো ছবি হয় না। কিন্তু একজন শক্তিশালি নির্মাতা না থাকলে এই ছবি ধ্বংস হয়ে যেত।
বিখ্যাত মানুষের জীবন নিয়ে ছবি বানানো খুবই কঠিন একটা কাজ। কোন গল্প ছেড়ে কোন গল্প বলবেন? কে সেই সিদ্ধান্ত নিবে? আর যখন সেটা হয় শেখ মুজিবের মতো একজন, যার সারা জীবনটাই গুরুত্বপূর্ণ, তখন পুরো ব্যাপারটা আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠে। এখানে অবশ্য অনেক কাজ এগিয়ে রেখেছেন শেখ মুজিব নিজেই। অনেক কিছু দেখলাম ছবিতে যেটা আমি উনার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পড়েছি। কিন্তু বই (আমার ক্ষেত্রে কমিক্স) এক জিনিস আর চিত্রনাট্য আরেক জিনিস। এখানে অবশ্যই বাহবা দিতে হবে এই ছবির চিত্রনাট্যকারদের। উনারা খুব কঠিন একটা কাজ ভালো ভাবে করেছেন।
এবার আসি অভিনয়ে। আরেফিন শুভ একজন ঠিকঠাক অভিনেতা। কিন্তু উনি যে আমাকে ৩ ঘণ্টার জন্য বিশ্বাস করিয়ে রাখবেন যে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান, এটা আমি কল্পনাই করি নাই। এটা ভাবার সাহসই হয় নাই। আমার সাহস এবং কল্পনা ভেঙে দিয়ে আরেফিন শুভ একটা ক্যারিয়ার ডিফাইনিং পারফর্মেন্স দিয়েছেন। শুরুতে যখন আমরা তরুন মুজিব দেখছি তখন আমার তাকে আরেফিন শুভই লাগছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন মুজিব বড় হতে থাকে, তখন কখন জানি আরেফিন শুভর জায়গায় আমি শেখ মুজিবকেই দেখতে শুরু করলাম। ঠিক কখন এটা হয়েছে আমার মনে নাই, কিন্তু ব্যাপারটা পুরো ম্যাজিকেল ছিল।
আরেকটা জিনিস যেটা আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে হচ্ছে শেখ মুজিব এবং উনার বউ রেনুর সম্পর্ক। আমি খুব চেয়েছিলাম যেন এখানে শুধু নেতা মুজিবকে না দেখানো হয়। আমি শেখ মুজিবকে একজন সন্তান, একজম জামাই, একজন পিতা, একজন মানুষ হিসাবে দেখতে চেয়েছিলাম। এবং নির্মাতা শ্যাম বেনেগল এই কাজটা খুব সুন্দর করে করেছেন। বিশেষ করে মুজিব ও রেনুর সম্পর্ক খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। নেতা মুজিব সম্বন্ধে আমরা কম বেশি অনেক কিছু জানি। কিন্তু পারিবারিক শেখ মুজিব ছিল আমার জন্য একদম নতুন কিছু। আমার বেশিরভাগ আবেগ জন্মেছে পারিবারিক শেখ মুজিবের গল্পগুলো থেকে। আরেফিন শুভ যেমন একটা ক্যারিয়ার ডিফাইনিং পারফর্মেন্স দিয়েছেন, রেনু চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিসাও একটা ক্যারিয়ার ডিফাইনিং পারফর্মেন্স দিয়েছেন। হয়তো টেকনিক্যালি তিসার রোল খুব কঠিন কিছু ছিল না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছি এই শান্ত কিন্তু শক্তিশালি মানুষটাই বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ও আমাদের প্রাইম মিনিস্টারের মা। এটা কিন্তু সহজ কাজ না।
বলতে গেলে সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছেন। এবং ছবির নির্মাণটাও ভালো হয়েছে, যেটার কারণে ৩ ঘণ্টার জন্য আমি পুরো ডুবে ছিলাম গল্পে।
দ্যা ব্যাড - বলতে গেলে তেমন খারাপ কিছু নাই।
দ্যা অসহ্য - অসহ্য লাগার প্রশ্নই আসে না।
দ্যা শেষ কথা - বঙ্গবন্ধুর জীবন যেভাবে শেষ হয়, ছবিটাও সেভাবে শেষ হয়। একদম ব্রুটাল। আমি নিতে পারি নাই। চোখে পানি চলে আসছে। আমাদের স্বভাব ভালো জিনিস নষ্ট করে দেয়া। এই ছবি একটা ভালো জিনিস। এটাকে পলিটিক্সের প্যাঁচে ফেলে নষ্ট করবেন না। সবাই ছবি দেখুন। তারপর যা খুশি বলুন পলিটিক্স নিয়ে, ছবি নিয়ে। কিন্তু না দেখে বলবেন না প্লিজ।
Comentarios