অসময় - এ সময়ের দারুণ গল্প
- Shakib Chowdhury
- May 25, 2024
- 2 min read
। রেটিং – দশে ৮.৫ ।

আরাম করে বাসায় বসে কাজল আরেফিন অমি নির্মিত ছবি ‘অসময়’ দেখে ফেললাম বঙ্গ টিভিতে।
দ্যা গুড – নির্মাতা অমিকে সবাই চেনেন অত্যন্ত জনপ্রিয় সিরিজ ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ থেকে। আমি এটা কখনো দেখি নাই, কিন্তু সিরিজটা যে প্রচণ্ড জনপ্রিয় সেটা জানি। আমার নিকট আত্মীয়স্বজন যারা সুদুর আমেরিকা থাকে তারাও এই সিরিজটা দেখত এবং খুব মন খারাপ করে যখন শেষ হয়ে যায় (তাদেরকে এই ছবির ব্যাপারে বলতে হবে)। যাই হোক, অমির প্রথম ছবি, সেখানে আবার আমার দোস্ত ইরেশ জাকের আছে, তাই ইতিমধ্যে অনেক দেখার আগ্রহ ছিল। তাই খুব খুশি হয়ে বলছি ছবিটা ভালো হয়েছে।
প্রথমেই আমার বলতে হবে অমির চিত্রনাট্য নিয়ে। খুব সুন্দর একটা গল্প ভেবেছেন অমি, এবং তারপর সেটা গুছিয়ে একটা দারুণ স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। গল্পের প্রধান চরিত্রদের সবার একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে যেটা সুন্দর ভাবে ফুটে আসে তাদের আলাপ আলোচনায়, ভাব ভঙ্গিতে। এখানে অভিনেতা/অভিনেত্রি সংলাপ ছুড়তে ব্যস্ত ছিলেন না, তারা একজন আরেকজনের সাথে আলাপ করেছেন, কথোপকথন করেছেন। এবং এই আলাপ খুব সাজিয়ে, মজা করে, আবেগ দিয়ে লিখেছেন ও ডিরেকশন দিয়েছেন অমি।
এই ছবিতে বেশ কিছু ধরণের সম্পর্ক দেখি আমরা। ভার্সিটি ছাত্রি তাসনিয়া ফারিন ও তার পরিবার, তার বন্ধুবান্ধব। উকিল রুনা খান ও তার পরিবার। এবং সাংবাদিক শারাফ জীবন ও পুলিশ অফিসার ইরেশ জাকের। প্রত্যেকটা খুবই চিন্তাভাবনা করে লেখা হয়েছে যাতে প্রত্যেকটা সম্পর্কের মাঝে আমরা একটা ভিন্ন স্বাদ পাই। অসম্ভব ভালো লেগেছে তারিক আনাম এর চরিত্র এবং অভিনয়। অসাধারণ লেগেছে ইরেশ জাকের ও শারাফ জীবনের আলাল/দুলাল পার্টনারশিপ। এবং এই প্রথম আমি তাসনিয়া ফারিনের অভিনয়ে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। তার যে একটা চরিত্র ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস, সেখান থেকে বের হতে পেরেছেন তিনি। অথবা এটা সম্পূর্ণ অমির কৃতিত্ব। অথবার দুজনার। যাই হোক, তাসনিয়া ফারিন তার ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন এই ছবিতে।
দ্যা ব্যাড – অমির ফিল্মের ভাব ভঙ্গি ধরতে একটু সমসা হয়েছে। ‘অসময়’ দেখে আমি ফিল্ম ভাব পাই নাই, পেয়েছি নাটক ভাব। অর্থাৎ টিভির জন্য অথবা ছোট পর্দার জন্য মানানসই। ‘অসময়’ থেকে তউকির ইসলাম নির্মিত ‘সিনপাট’ আরো অনেক বেশি ফিল্মি। মহানগর ২ আরো ফিল্মি। ফিল্মের একটা আলাদা ভাষা আছে। ক্যামেরা একটু অন্য ভাবে চলবে, সিকুয়েন্স একটু ভিন্ন ভাবে সাজানো হবে ইত্যাদি। কাহিনী ও অভিনয়ের ব্যাপারে ‘সিনপাট’ থেকে ‘অসময়’ অনেক উপরে। কিন্তু দেখে মনে হয়েছে নাটক। এছাড়া বলব গল্পের শেষটায় আরেকটু ধাক্কা, আরেকটু আবেগ, আরেকটু সময় দরকার ছিল। পুরো ছবিতে যেই টেনশন থাকে, সেটা একটু সহজেই রিলিজ হয়ে যায় এবং কিছু জরুরি স্টোরি পয়েন্টের ঠিকঠাক রেজলিউশন হয় নাই।
দ্যা অসহ্য – আবহ সঙ্গীত। জাস্ট অসহ্য। সাউন্ড ডিজাইন খারাপ না, চলে। কিন্তু মিউজিক ছিল খুবই বিরক্তিকর এবং ছবিটাকে নাটক ফিল দেয়ার পেছনে অনেক দায়ী। সুমির গান অনেক সুন্দর, কিন্তু বাকি মিউজিক জাস্ট অসহ্য। আসাকরি পরের কাজে অমি যথাযথ সময় ও নিষ্ঠা দিয়ে সাউন্ড ও মিউজিকের কাজ করবেন।
দ্যা শেষ কথা - কোন ছবিই পারফেক্ট হয় না। এটাও না। তবে বাংলাদেশে ভালো ছবির উদ্দেশ্যে যে যাত্রা, সে পথে এই ছবি একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের গল্প। এটা আমার আপনার গল্প। বলা হয়েছে অসাধারণ ভাবে। এখানে সুখ, দুঃখ, কমেডি, ড্রামা সব আছে। বঙ্গ টিভিতে চলছে। দেখে ফেলুন।
লিখেছেন শাকিব চৌধুরী
Коментарі